বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জালাল মিয়া।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জালাল মিয়া।

১৯৮৩ সালের ভাদ্র মাসের বন্যার ৪১ বছর পর ২০২৪ সালের ভাদ্র মাসে আরও একটি বিভীষিকাময় বন্যার স্বাক্ষী হল উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি রাজ্য ত্রিপুরার ৪০ লক্ষ মানুষ। এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি এমন খুব কম পরিবারই আছে। এখনও বহু মানুষ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে আছেন। তারা কবে নাগাদ বাড়িতে ফিরতে পারবেন এখনও কেউ বলতে পারছেন না। এই চরম সঙ্কটের মুহূর্তে সরকারের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বন্যা দূর্গত বিপন্ন মানুষদের সাহায্য করার জন্য। এই পৃথিবীতে এখনও যে মানবতা বেঁচে আছে তা বন্যা দূর্গত এলাকা গুলিতে না গেলে বুঝা যাবে না। বন্যা দূর্গত মানুষদের বেঁচে থাকার নির্মম দৃশ্য দেখলে একদিকে যেমন যেকোন মানুষের মন কাঁদবে ঠিক তার পাশাপাশি বিভিন্ন মানুষের সাহায্য করার মানসিকতা দেখলে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার পরিবেশ গড়ে উঠে। তার মধ্যে গত কদিন ধরে লাগাতর উদয়পুর ও অমরপুর মহকুমার বন্যা কবলিত প্রায় সবকটি অলিতে গলিতে গাড়ি বুঝাই করে পরিস্রুত পানীয় জল ও শুকনা খাবার নিয়ে পৌঁছে গেছেন উদয়পুর ছাতারিয়া এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবি আলী আশ্রব মিঞা ওরফে জালাল মিঞা। তার স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জালাল খেদমত আল ইনসান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে চলছেন তিনি। তিনি এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। রাজ্যের মানুষ যেদিন থেকে বন্যার কবলে পড়েন সেদিন থেকেই তিনি এক মুহুর্তের জন্য ঘরে বসে নেই। সেই সকাল বেলা কয়েকটি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বন্যা কবলিত এলাকা গুলিতে। কোন মানুষ যাতে তার দেওয়া সাহায্য থেকে বঞ্চিত না হন তাই তিনি গাড়ির মধ্যে মাইক লাগিয়ে বন্যা কবলিত এলাকায় ঢুকে মাইক দিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সহিত সব মানুষকে ডেকে এনে তাদের হাতে পানীয় জল ও শুকনো খাবার তুলে দেন। যেখানে গিয়ে তার নেওয়া ত্রাণ শেষ হচ্ছে পরক্ষণে ঠিক ওই জায়গা থেকে শুরু করেন। এইভাবে অনবরত গত কদিন ধরে চলছে এই কাজ। প্রতিটা এলাকায় গেলে যে জিনিসটার সবচেয়ে বেশি চাহিদা তিনি লক্ষ্য করেছেন সেটা হল পরিশোধিত পানীয় জল। দূষিত জল পান করে ইতিমধ্যে বহু মানুষ বিভিন্ন জল বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাই জালাল মিঞা গত তিন দিন ধরে শুধু পরিস্রুত পানীয় জল বিতরণ করে চলছেন। গত ২২ তারিখ থেকে লাগাতর চলছে এই কর্মকাণ্ড। যত দিন বিপন্ন মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে তাদের নিজ বাসভবনের দিকে ফিরে যেতে না পারবেন ততদিন তার এই কর্মকাণ্ড চলতে বলে জানিয়ে দেন জালাল মিঞা। ইতিমধ্যে অমরপুর মহকুমার মৈলাক , সরবং, ডালাক, মিঞার বাজার, রাঙামাটি, রাংকাং , বামপুর এবং উদয়পুর মহমকুমার হিরাপুর, ছাতাড়িয়া, উদয়পুর রেল স্টেশন, পালাটানা , কাকড়াবন, শালগড়া, আমতলী সহ আরো বহু এলাকায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষের হাতে পানীয় জল, চাল, ডাল, আলু, তেল ও বিভিন্ন মশলা দিয়ে আসছেন। এমনকি প্রতিদিন জালাল মিঞার বাড়ি থেকেও অনেক মানুষ ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন। জালাল মিঞার লক্ষ্য এই দুই মহকুমায় বন্যা কবলিত প্রতিটা এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে প্রতিটা মানুষের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া। সময়ের অভাবে অন্য মহকুমায় যেতে পারছেন না। তার ইচ্ছা ছিল বন্যা কবলিত অন্য মহকুমা গুলিতে গিয়েও সাহায্য করার। এই ভাবে বিপন্ন মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যেতে চান জালাল মিঞা।

সম্পরকিত খবর